আমরা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ছিলাম, কিন্তু আমাদের জীবনের এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা আমাদের পথ একেবারে বদলে দেয়।
ছোটবেলা থেকেই আমাদের স্বপ্ন ছিল বড় কিছু করা। প্রযুক্তির প্রতি ভালোবাসা ছিল প্রবল, তাই আমরা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করি। পড়াশোনা শেষে, আমরা একাধিক টেক কোম্পানিতে কাজ করার সুযোগ পাই। শুরুটা ছিল দারুণ—নতুন নতুন প্রযুক্তি শেখা, বড় বড় প্রজেক্টে কাজ করা, এবং নামকরা ক্লায়েন্টদের সাথে যুক্ত হওয়া।
কিন্তু খুব দ্রুতই আমরা বুঝতে পারি, এই ইন্ডাস্ট্রির বাস্তবতা। আমাদের সৃজনশীলতা, আবেগ, আর মানবিক মূল্যবোধগুলো যেন ধীরে ধীরে থমকে যাচ্ছে। পুরো ইন্ডাস্ট্রি যেন শুধু “ডেডলাইন” আর “ডেলিভারি”-র দাস। প্রজেক্ট শেষ করাই মূল লক্ষ্য, কিন্তু সেই কাজের মাধ্যমে মানুষের জীবনে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে না—এই উপলব্ধি আমাদের ভিতর থেকে নাড়িয়ে দেয়।

আমরা নিজেদেরকে প্রশ্ন করতে শুরু করি—এই কি তবে জীবনের আসল লক্ষ্য? শুধু কোড লিখেই কি আমাদের দিনের পর দিন কাটিয়ে দিতে হবে?
 এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই একদিন ঘটে যায় এক হৃদয়বিদারক ঘটনা—আমাদের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর জানা যায়, তার অসুস্থতার মূল কারণ ছিল খাবারে থাকা বিষাক্ত কেমিক্যাল—বিশেষ করে ফরমালিন ও ক্ষতিকর সংরক্ষণ উপাদান, যা আজকাল অনেক খাবারে ব্যবহার করা হয়।
এই ঘটনা আমাদের জীবনকে পুরোপুরি বদলে দেয়। প্রযুক্তির দুনিয়ায় আমরা যে ‘স্মার্ট’ হচ্ছি, সেটার কোনো মূল্য নেই যদি আমাদের খাবারই ‘স্মার্টলি’ বিষাক্ত হয়ে ওঠে। আমরা তখন বুঝি, উন্নয়ন মানে শুধু বিল্ডিং, কোডিং, আর প্রযুক্তি নয়—উন্নয়ন মানে প্রকৃত অর্থে মানুষকে নিরাপদ ও সচেতন রাখা।
এই চেতনা থেকেই আমাদের নতুন পথচলার শুরু। আমরা সিদ্ধান্ত নেই, শুধু সফটওয়্যার ডেভেলপার হিসেবেই থেমে থাকবো না—মানুষের জন্য, দেশের জন্য, আর নিজের আত্মার শান্তির জন্য এমন কিছু করবো, যা সত্যিকার অর্থে মানুষের উপকারে আসবে। আমরা ফিরে যাই আমাদের শেকড়ে—গ্রামবাংলার মাটিতে। সেই মাটির গন্ধ, সেই মানুষের সরলতা, আর তাদের হাতে তৈরি খাবারের মধ্যে যে ভালোবাসা আর বিশুদ্ধতা থাকে, সেটাই আমরা খুঁজে পাই। আমরা আবিষ্কার করি—পল্লী অঞ্চলের মায়েরা এখনো তাঁদের ভালোবাসা দিয়ে তৈরি করছেন নানান রকম পিঠা, যেগুলো সম্পূর্ণ কেমিকেলমুক্ত, অর্গানিক, এবং প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি। কিন্তু শহরের মানুষ সেই স্বাদ থেকে বঞ্চিত। আমরা সেই সেতুবন্ধনের দায়িত্ব নেই। আমরা ঠিক করি, শহরের মানুষের কাছে এই বিশুদ্ধ খাবার পৌঁছে দেবো—একটা নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে। শুরুটা সহজ ছিল না। প্রযুক্তি আর কৃষির মধ্যে সমন্বয় আনতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। কিন্তু আমরা হাল ছাড়িনি। আমাদের টিমের প্রত্যেকে একসময় টেক দুনিয়ায় কাজ করলেও, এখন আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি মানুষের জীবনকে ছুঁয়ে যেতে—খাদ্যের মাধ্যমে, ভালোবাসার মাধ্যমে। আজ আমাদের ব্র্যান্ডের প্রতিটি পিঠা শুধু একটা খাবার নয়, এটা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য, মানুষের ভালোবাসা, আর নিরাপদ ভবিষ্যতের প্রতীক। আমরা চাই, আপনার ঘরে পৌঁছে যাক সেই ভালোবাসা—যা প্রতিটি পিঠার মধ্যে লুকিয়ে আছে। আমাদের লক্ষ্য শুধু ব্যবসা নয়, একটি আন্দোলন গড়ে তোলা—সুস্বাদু, স্বাস্থ্যকর ও বিশুদ্ধ খাবার নিয়ে। আমরা বিশ্বাস করি, প্রযুক্তি যদি ভালোবাসার সাথে মিলে যায়, তাহলে সেটা শুধু কোড নয়, একটা সুন্দর সমাজও তৈরি করতে পারে। এটাই আমাদের গল্প। আমরা চাই আপনি আমাদের সঙ্গী হোন—এই পরিবর্তনের পথে, এই ভালোবাসার যাত্রায়।